শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ, ১৪৩১
অনলাইন ডেস্ক।।
লক্ষ্মীপুরের আলোচিত সৈয়দ নুরুল আজিম বাবর কারামুক্ত হয়েছেন। প্রায় সাড়ে ১৮ বছর পর রোববার (১৬ আগস্ট) সকালে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হন। শিবির নেতা মহসিন হত্যার ঘটনায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন।
ঢাকার গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতারের পর ২০০২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি কারাবন্দি হন। দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারের জেলার সাখাওয়াত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বাবরের ভাই ও জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল হাসান পলাশ বলেন, বাবর কারামুক্ত হয়ে বাড়িতে এসে বাবার কবর জিয়ারত করেছেন। অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তিনি ঢাকা গেছেন।
জানা গেছে, বাবর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড শমসেরাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আলোচিত মেয়র আবু তাহেরের বড় ছেলে এইচএম বিপ্লবের বন্ধু। বিপ্লবও শিবির নেতা মহসিন ও বিএনপি নেতা আইনজীবী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সাড়ে ৭ বছর কারাবন্দি থেকে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মুক্ত হন।
এর আগে মামলাগুলোতে বিপ্লব প্রায় ১০ বছর পলাতক ছিলেন। মহসিন হত্যা মামলার অন্য আসামি আবদুল জব্বার লাভলু প্রায় সাড়ে ৭ বছর কারাবন্দি থাকার পর ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর গাজীপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে বের হয়।
সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের ত্রাসের কারণে লক্ষ্মীপুর সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে খ্যাতি পায়। চারদিকে চলে ত্রাসের রাজত্ব।
আদালত ও মামলা সূত্র জানায়, নিহত মহসিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এক বৈঠক থেকে আসামিরা টেনে হিঁচড়ে মহসিনকে পার্শ্ববর্তী আবদুল আউয়াল এমপির সুপারির বাগানে নিয়ে যায়। তারা মহসিনের দুই হাত চেপে ধরে দুই পায়ে ও বগলে গুলি করলে সে লুটিয়ে পড়ে। পরে তারাই মহসিনকে রিকশা ডেকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।
এ মামলায় বিপ্লব ও বাবরসহ লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ ৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। ২০০৪ সালের ৬ জুলাই লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হাইকোর্টে রেফারেন্স পাঠান। এ সময় বিপ্লব ও লাভলু বাদে বাবর, মারজু নুরুল্লাহ ও মেহেদী হাসান কারাগারে ছিল। তারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য তৈরি করা যন্ত্রণাদায়ক সেলে দীর্ঘদিন বন্দি ছিলেন। লক্ষ্মীপুর আদালতের রায়ের বিপক্ষে হাইকোর্টে আপিল করা হয়। পরবর্তীতে মহসিনের শরীরের গুরুত্বপূর্ণস্থানে গুলি না করা এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার চেষ্টা করার কারণে বিপ্লব, বাবর ও লাভলুর শাস্তি লঘু করে হাইকোর্ট। তবে তাদের যাবজ্জীবন বহাল রাখা হয়। মার্জু নুরুল্লাহ এবং মেহেদী হাসানকে নির্দোষ সাব্যস্ত করা হয়।
রাজনৈতিক বিবেচনায় ও আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে বাবরসহ সাজাপ্রাপ্ত তিন আসামির সাজা কমিয়ে দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। বাবর লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম হত্যা মামলারও আসামি ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ওই মামলায় নির্দোষ সাব্যস্ত হয়।
প্রসঙ্গত, শিবির নেতা মহসিন হত্যা মামলায় সাজা শেষে তিন আসামি বিপ্লব, বাবর ও লাভলু বিভিন্ন সময় কারামুক্ত হন। ২০১৪ সালের ১ আগস্ট তাহের পুত্র বিপ্লব লক্ষ্মীপুর কারাগারে বিয়ে করে দেশ-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। সূত্র-জাগোনিউজ